আমাদের বাসার সবাই পাগল।
আমার বাবা-মা পাগল। দাদা এবং দিদা পাগল। এমনকি আমাদের বাসায় যে কাজের বুয়া কাজ করে, যার নাম নয়নের মা—তার মাথায়ও ভীষণ গোলমাল আছে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
কোন পাগলের কথা দিয়ে গল্প শুরু করব? সবচেয়ে সিনিয়র পাগলের কথাই আগে বলি। তারপর বয়সের ক্রম অনুযায়ী আগানো যাবে। কেমন?”
এ রকম পাগলামোয় ভরা একটি পরিবারের কাহিনি পালিয়ে যাবার পর।
আমার জীবনের লক্ষ্য বারবার বদলে গেছে।
ছোটবেলায় আমি আইসক্রিমওয়ালা হতে চেয়েছিলাম। স্কুলে পড়ার সময় হতে চেয়েছিলাম ডাক্তার। যৌবনে আমার জীবনের লক্ষ্য আমূল বদলে যায়। তখন আমি লেডিস হোস্টেলের দারোয়ান হওয়ার বাসনা পোষণ করতাম।
আমি শেষমেশ কিছুই হতে পারিনি। যেটা হয়েছি, তার নাম ফেরিওয়ালা, আমি গল্প ফেরি করে বেড়াই।
আড্ডায় আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প বলে যাই। সেই গল্প শোনার জন্য অনেকেই আড্ডায় আসেন। একসময় আড্ডার পরিসর বেড়ে যায়। আমি রেডিওতে রাত জেগে গল্প বলা শুরু করি। কয়েক বছর ধরে গল্পগুলো লিখে ফেলার চেষ্টা করছি। আমার মতো অলস মানুষের জন্য এটি অনেক কঠিন কাজ।
আমার জন্ম ঢাকায়, ১৯৭৭ সালে। আমার জন্ম নিয়েও তিনটি গল্প আছে। যে ডাক্তারের হাতে আমি জন্মেছিলাম, ওই ডাক্তারনি ছিলেন দেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক। পরবর্তী সময়ে অন্য কারণে তিনি বিখ্যাত হন। পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে তার ছেলে একটি খুন করেছিল। নব্বইয়ের দশকে সেই ছেলেটির ফাঁসি হয়। সে সময় এ ঘটনাটি বেশ সাড়া ফেলেছিল।
জন্ম নিয়ে দ্বিতীয় গল্পটি হলো, আমি জন্মেছিলাম রবিবারে। কাজেই আমার বাবা আমার নাম রাখেন রবি। যদিও এ নামটি নিয়ে সেই সময়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়। মুসলমান ছেলের নাম কেন রবি হবে, এ নিয়ে আমার আত্মীয়রা আপত্তি তোলেন। আমার পিতা দ্বিধায় পড়ে যান।
আমার জন্মসংক্রান্ত তৃতীয় গল্পটি বলতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ফ্ল্যাপে জায়গা কম থাকার কারণে সেই গল্পটি আপাতত মুলতবি থাকুক।
লেখক পরিচিতিতে শুধু এ বাক্যটিই থাকুক, আমি আশীফ এন্তাজ রবি, গল্পের ফেরিওয়ালা।
মো. ইয়াছিন
একজন শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী। সারাদিন কর্মস্থলে কাটিয়ে বাসায় ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে কাগজ-কলম নিয়ে বসে পড়াই তার নিত্যদিনের কাজ। এই কাগজ-কলম তার পৃথিবী, তার জীবন, তার স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন এই পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আগে এমন কিছু লিখে রেখে যাওয়া যার মাধ্যমে মানুষ তাকে চিরকাল মনে রাখবে। সেই চেষ্টায় তিনি রাত জাগেন, কাগজ-কলমের সাথে কথা বলেন, শব্দ জমা করেন। দিনশেষে তার একমাত্র সম্বল, একটি একটি করে জমিয়ে রাখা শব্দগুলো দিয়ে বই প্রকাশিত হয়। আশা ফুরায় না। আরো ভালো কিছু করার লোভে তিনি আবারও কাগজ-কলম নিয়ে বসে পড়েন। আবার শুরু হয় শব্দ জমিয়ে রাখা।
বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন আল মাহমুদের কবিতার বই পড়েননি এমন সাহিত্যপ্রেমী খুঁজে পাওয়া ভার। গুণী এই কবি একাধারে একজন সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে তার কবি পরিচয়। আধুনিক বাংলা কবিতা নানা দিক থেকে তার কাছে ঋণী থাকবে। বাচনভঙ্গি আর রচনাশৈলীতে তার কবিতা সমকালীন যেকোনো কবির তুলনায় অনন্য। ‘কবিতাসমগ্র’ (দুই খন্ড) ‘উড়ালকাব্য’, ‘সোনালি কাবিন’, ‘আল মাহমুদের স্বাধীনতার কবিতা’, ‘প্রেমের কবিতা সমগ্র’, ‘আল মাহমুদের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ইত্যাদি কবিতার বই নিয়ে আল মাহমুদ কবিতাসমগ্র। এছাড়াও আল মাহমুদ উপন্যাস সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে তিন খণ্ডে। জাতীয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক টানাপোড়েন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি ও প্রেক্ষাপটসহ সমাজ ও ব্যক্তি জীবনের দ্বন্দ্ব স্থান পেয়েছে আল মাহমুদ এর বই সমূহ-তে। ‘কালের কলম’, ‘লোক লোকান্তর’, ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’, ‘আরব্য রজনীর রাজহাঁস’, ‘গল্প সমগ্র’, ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য লেখা।
আল মাহমুদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে। তার পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। শিক্ষাজীবনেই তিনি লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত হন। রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল আর মধ্যযুগের বৈষ্ণব পদাবলী পাঠ করতে করতে নিজের কবি প্রতিভা আবিষ্কার করেন তিনি। ১৯৫৪ সালে সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। কিছুকাল পরই এ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পুরো ৬০-এর দশক জুড়ে তিনি অসংখ্য কবিতা রচনা করেন এবং কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও খ্যাতি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রবাসী সরকারের হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ পত্রিকায় সরকার বিরোধী লেখালেখির কারণে এক বছরের জন্য কারাদণ্ডও ভোগ করতে হয় তাকে। ১৯৭৫-৯৩ সাল পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে কাজ করে কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
কবি আল মাহমুদ তার অনবদ্য রচনাশৈলীর জন্য ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ‘একুশে পদক’, ‘জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার’, ‘নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক’ সহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তিনি পরলোকগমন করেন।
আসিব রায়হান
কথাসাহিত্যিক আসিব রায়হান পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, নেশায় একজন লেখক। তিনি ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এসএসসি ও রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বিএসসি ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে। প্রাণের নেশায় লেখালেখিতে হাতেখড়ি। ছোটগল্পের বই ‘এডিসনের মা’র মাধ্যমে লেখকজীবনে আত্মপ্রকাশ। এরপর একে একে জন্ম নিয়েছে ভ্রমণ সাহিত্য ‘দেশে বিদেশে মুসাফিরের বেশে’ ও উপন্যাস ‘মহাতরু’।
হোক সেটা গ্রামের আবহ কিংবা শহুরে জীবনের চাঞ্চল্য, উভয় ভাব প্রকাশেই তিনি তার লেখায় সমান পারদর্শিতা দেখান। তার লেখায় আবেগ ও বাস্তবতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন পাওয়া যায়। সর্বোপরি, তিনি সৃজনশীলতার মাধ্যমে অবচেতন সত্তার উন্মেষ ঘটান, সৃষ্টি করেন নিত্যনতুন জগৎ।
আমার জীবনের লক্ষ্য বারবার বদলে গেছে।
ছোটবেলায় আমি আইসক্রিমওয়ালা হতে চেয়েছিলাম। স্কুলে পড়ার সময় হতে চেয়েছিলাম ডাক্তার। যৌবনে আমার জীবনের লক্ষ্য আমূল বদলে যায়। তখন আমি লেডিস হোস্টেলের দারোয়ান হওয়ার বাসনা পোষণ করতাম।
আমি শেষমেশ কিছুই হতে পারিনি। যেটা হয়েছি, তার নাম ফেরিওয়ালা, আমি গল্প ফেরি করে বেড়াই।
আড্ডায় আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প বলে যাই। সেই গল্প শোনার জন্য অনেকেই আড্ডায় আসেন। একসময় আড্ডার পরিসর বেড়ে যায়। আমি রেডিওতে রাত জেগে গল্প বলা শুরু করি। কয়েক বছর ধরে গল্পগুলো লিখে ফেলার চেষ্টা করছি। আমার মতো অলস মানুষের জন্য এটি অনেক কঠিন কাজ।
আমার জন্ম ঢাকায়, ১৯৭৭ সালে। আমার জন্ম নিয়েও তিনটি গল্প আছে। যে ডাক্তারের হাতে আমি জন্মেছিলাম, ওই ডাক্তারনি ছিলেন দেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক। পরবর্তী সময়ে অন্য কারণে তিনি বিখ্যাত হন। পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে তার ছেলে একটি খুন করেছিল। নব্বইয়ের দশকে সেই ছেলেটির ফাঁসি হয়। সে সময় এ ঘটনাটি বেশ সাড়া ফেলেছিল।
জন্ম নিয়ে দ্বিতীয় গল্পটি হলো, আমি জন্মেছিলাম রবিবারে। কাজেই আমার বাবা আমার নাম রাখেন রবি। যদিও এ নামটি নিয়ে সেই সময়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়। মুসলমান ছেলের নাম কেন রবি হবে, এ নিয়ে আমার আত্মীয়রা আপত্তি তোলেন। আমার পিতা দ্বিধায় পড়ে যান।
আমার জন্মসংক্রান্ত তৃতীয় গল্পটি বলতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ফ্ল্যাপে জায়গা কম থাকার কারণে সেই গল্পটি আপাতত মুলতবি থাকুক।
লেখক পরিচিতিতে শুধু এ বাক্যটিই থাকুক, আমি আশীফ এন্তাজ রবি, গল্পের ফেরিওয়ালা।
প্রকাশিত গ্রন্থ
পূর্বপূরুষ
চন্দ্রমুখী
কাগজের নৌকা
পালিয়ে যাবার পরে
আমার আছে ফেসবুক
গল্পতুচ্ছ
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার কৈশোর ও যৌবনের অধিকাংশ সময় ভাগলপুরে মায়ের বাড়িতেই অতিবাহিত হয়। পরীক্ষার ফি জোগাড় করতে না পারায় তিনি কলেজশিক্ষা শেষ করতে পারেননি।
১৯০৩ সালে জীবিকার সন্ধানে তিনি মায়ানমারের রেঙ্গুন যাত্রা করেন। ১৯১৬ সাল পর্যন্ত রেঙ্গুনেই ছিলেন। সেখানে অবস্থানকালে সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। ‘ভারতী’ পত্রিকায় ‘বড়দিদি’ উপন্যাস প্রকাশিত হলে তার সাহিত্যিক খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর একের পর এক গল্প-উপন্যাস লেখেন তিনি। বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকে পরিণত হন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তার দরুন তিনি ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’ নামে পরিচিতি পান।
সাধারণ বাঙালি পাঠকের আবেগকে তিনি যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তার বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে: পল্লীসমাজ, দেবদাস, শ্রীকান্ত (চার পর্ব), গৃহদাহ, দেনাপাওনা, পথের দাবী, শেষ প্রশ্ন প্রভৃতি। সাহিত্য প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট উপাধি লাভ করেন।
বাংলা সাহিত্যের এই কালজয়ী কথাশিল্পীর জীবনাবসান ঘটে ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে, কলকাতায়।
জন্ম ১৯৭৭ সালে ২৯ জানুয়ারী রংপুরে। গল্পকার, ঔপন্যাসিক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে। পেশা সাংবাদিকতা। শৈশব-কৈশর কেটেছে উত্তরের রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা ও দক্ষিণ-পশ্চিমের কুষ্টিয়ায়। ২০০৬ সালে তার গল্পগ্রন্থ ‘ব্যক্তিগত বসন্তদিন’ প্রকাশিত হয়েছে কাগজ প্রকাশনী থেকে। ২০১০ সালে ভাষাচিত্র থেকে প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাস ‘ফেস বাই ফেস’। ২০১১ সালে ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে গল্পগ্রন্থ ‘দেহ’। গল্প-উপন্যাস রচনা ছাড়াও তিনি একসময় বিচিত্র বিষয়ে ব্লগ লিখতেন। এখন ফেসবুকে সময় কাটে নানা বিষয়ে ছোট ছোট কথা ও কলহে।
জন্ম ১৯৮২ সালে, গাইবান্ধায়। সেখানেই উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ।
উৎসবপ্রিয়। কোনো উৎসব ঘিরে যখন মানুষ একত্র হয়, সবার প্রাণে প্রাণ মেলাতে ভালোবাসেন। মনে মনে সে আনন্দ উপভোগ করেন। সবুজ পছন্দের রং বলে প্রকৃতি তার এত প্রিয়। প্রকৃতির ঔদার্যে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হন তিনি।
‘সাদা খাম’ লেখকের দ্বিতীয় উপন্যাস। প্রথম উপন্যাস ‘দীঘল জলে নিমগ্নতা’ প্রকাশ হয় ২০২০ বইমেলায়। প্রথম গল্পগ্রন্থ: ‘সুতপার হাই হিল’ প্রকাশিত হয় ২০১৮ বইমেলায়।
Be the first to review “পালিয়ে যাবার পরে”