সুদত্ত বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা
"সুদত্ত বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা জন্ম ১৯৫১ সালে। রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার শামুকছড়ি গ্রামে। ১০ বছর বয়সে শৈশবের বসতি হারান কাপ্তাই বাঁধের জলে। ঠাঁই নেন রাজস্থলীতে। উনসত্তরের উত্তাল সময়ে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত হন। একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনকালে রাজস্থলীতে উত্তোলন করেন মানচিত্রখচিত বাংলাদেশের পতাকা। যুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর ‘স্বপ্নভঙ্গ’ তাঁকে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টিতে যোগদানে উদ্দীপ্ত করেছিল। ছয় মাস পরই তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক হন। ১৯৭৪ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম ‘রাজনৈতিক সাহায্যকারী’ হিসাবে মনোনীত হন। সংগ্রামী চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে ১৯৭৭ সালে গ্রেফতার হয়ে যান। ১৯৮৯ সালে দীর্ঘ কারাভোগের ইতি ঘটে। মুক্তি পেয়ে নিজেকে সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত করেন। হয়ে ওঠেন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার রক্ষা আন্দোলন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। অনন্ত সিংহ উদার মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আগত সংবেদনশীল এই তরুণ এদেশের ইতিহাসের নির্ণায়ক নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে পরিভ্রমণ করেছেন। সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন আটষট্টির আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-আন্দোলন, সত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। ছাত্রাবস্থায়ই সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদের আদর্শে তাঁর দীক্ষালাভ। ‘পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন’-এর সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল। যুদ্ধপূর্ব সময়কালে তিনি ‘লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি’র সামরিক শাখার সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৭২-এ তিনি ‘পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি’র সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘ পার্টিজীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করেছেন। অং চিং সচ্ছল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত চাকমা পরিবারে তাঁর জন্ম। ইংরেজিতে মাস্টার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আধুনিক চাকমা ভাষার কবি তিনি। রাঙ্গামাটি কলেজে অধ্যাপনারত অবস্থায় পার্টিতে সপরিবারে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে যোগদান করেন। সামাজিক প্রতিষ্ঠা ত্যাগ করে দুটি শিশুসন্তান ও শিক্ষিতা স্ত্রী নিয়ে অনিশ্চিত, কষ্টকর পথে তাঁর পা বাড়ানো যেকোনো স্থান ও কালের বিচারেই বিরল ঘটনা। তাঁর স্ত্রীও পাহাড়ি জনগণের মধ্যে পার্টির কাজ করেছেন। সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে নিরহঙ্কার এই মানুষটি অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে থেকে কাজ করেছেন। তাঁর অনন্য কৃতিত্ব হচ্ছে অত্যন্ত রক্ষণশীল ম্রো জনগোষ্ঠীর একজন হয়ে ওঠা।"