আমাদের সংস্কৃতি

আদর্শ’র সংস্কৃতি [Draft]

মানব সভ্যতা বিকাশে জ্ঞানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর জ্ঞানকে দেশ থেকে দেশে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, ব্যক্তি থেকে সমষ্টিতে ছড়িয়ে দেয়ার অদ্বিতীয় মাধ্যম হচ্ছে বই। বইয়ের মাধ্যমে আমরা এমন জ্ঞানকে ছড়িয়ে দিতে চাই, যেন পৃথিবী আরও ন্যায় ও কল্যাণময় হয়ে ওঠে।

প্রতিবছর লক্ষাধিক বই পাঠকের হাতে তুলে দিচ্ছে আদর্শ। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আদর্শ মানুষের চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি ও মানবিক গুণাবলির বিকাশ এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে প্রতিটি পাঠকের হাতে নির্ভুল, সুসম্পাদিত, বৈচিত্র্যপূর্ণ উচ্চ মানসম্পন্ন লেখা, ছাপা, কাগজ ও বাঁধাইসমৃদ্ধ বই তুলে দিতে চায়। 

এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিবেদিত আদর্শর সদস্যগণ যে দর্শন মেনে চলেন সেগুলোই আমাদের সংস্কৃতি। যেমন: 

১। কর্মীদের ক্ষমতায়ন: কর্মীদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে উৎসাহিত করা।

২। স্বচ্ছতা: তথ্যের সরাসরি, বিশদ ও বাধাহীন প্রকাশ নিশ্চিত করা।

৩। বন্ধুতা: সদস্যদের পরস্পরের সঙ্গে সৎ, স্বচ্ছ ও বন্ধুত্বপূর্ণ থাকা।

৪। সেরাদের নিয়োগ: শুধুমাত্র অত্যন্ত কার্যকরী কর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

৫। বিধিবিধান পরিহার: নিয়মতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করা।

 

ভুলত্রুটি এড়ানো এবং কাজের মান, বইয়ের মানে উৎকর্ষতা আনার জন্য নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, মানুষই নিয়ম তৈরি করে; মানুষের চেয়ে নিয়ম বড় নয়। নিয়মের গ্যাড়াকলে যেনো কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় কিংবা কাজের গতি বাধাগ্রস্ত না হয়। এই ভাবধারার মধ্যদিয়ে আমরা একটি নমনীয়, মজাদার, উদ্দীপক (আনন্দ ও উদ্দীপনাময়), সৃষ্টিশীল, সহযোগিতাপূর্ণ এবং সফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে যাচ্ছি।

 

সত্যিকারের মূল্যবোধ

কে পুরস্কৃত হয় আর কাকে চলে যেতে হয় তা দিয়েই বোঝা যায় একটি প্রতিষ্ঠানের সত্যিকারের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি। এখানে আমাদের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে, যাতে বোঝা যায় আমরা ঠিক কোনো ধরনের আচরণ ও দক্ষতাকে বেশি মূল্য দিয়ে থাকি। আমরা যত বেশি এই মূল্যবোধগুলোর সাথে একাত্মতা বোধ করব, এরকম মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব, আদর্শতে আমাদের উন্নতির সম্ভাবনা তত বেশি। 

 

নিঃস্বার্থতা

  • আমরা নিজের ও টিমের স্বার্থের চেয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে প্রাধান্য দিই।
  • আমরা খোলা মন নিয়ে অসাধারণ সব আইডিয়া খুঁজে বের করি।
  • আমরা ব্যস্ততার মাঝেও সহকর্মীদের সাহায্য করার চেষ্টা করি।

 

আগ্রহ

  • আমরা দ্রুত ও আগ্রহের সাথে শিখতে চেষ্টা করি।
  • আমরা দক্ষতার বাইরের কোনো বিষয়েও কার্যকরী অবদান রাখতে চেষ্টা করি।
  • আমরা সজাগ থাকি, যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের চোখকে ফাঁকি দিতে না পারে।
  • পাঠকদের মানসিকতা এবং কিভাবে তাদের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে, আমরা সে বিষয়ে বোঝার চেষ্টা করি।
  • আমরা যে কোনো বিষয়ে বিকল্প দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি।

 

সততা ও সৎসাহস

  • আমরা আন্তরিক, নির্ভরযোগ্য, স্বচ্ছ ও কাজের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত।
  • সহকর্মীদের সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে হলে সেটা তার সামনেই করি, আড়ালে নয়।
  • নিজের ভুল দ্বিধাহীনভাবে ও সরাসরি স্বীকার করি।
  • মানুষকে তার অবস্থান ও মতাদর্শের ভিন্নতার উর্ধ্বে থেকে উপযুক্ত সম্মান দিই। 
  • চাপের মুখে পড়তে হতে পারে জেনেও সঠিক তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করি।

 

সাহসিকতা

  • আমরা আমাদের চিন্তাধারা নির্ভারভাবে প্রকাশ করতে পারি, যদি তা আদর্শ’র স্বার্থের অনুকূলে হয়, এবং যদি তা অস্বস্তিকরও হয়।
  • যন্ত্রণাদায়ক হলেও কঠিন ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিই।
  • ব্যর্থতার সম্ভাবনা স্বত্বেও বুদ্ধিদীপ্ত ঝুঁকি নিই।
  • আমাদের মূল্যবোধের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ যে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলি। 
  • সত্যের খাতিরে, যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকি।

 

আবেগ

  • আমরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের তৃষ্ণা দিয়ে অন্যদের অনুপ্রাণিত করি।
  • আমাদের পাঠক এবং প্রতিষ্ঠানের সফলতার ব্যাপারে আমরা তীব্রভাবে সচেতন থাকি।
  • আমরা দৃঢ় ও আশাবাদী।
  • অন্তরে আত্মবিশ্বাসী কিন্তু ব্যবহারে বিনয়ী থাকি।

 

বিচার-বিশ্লেষণী ক্ষমতা

  • কোনো বিষয়ে অস্পষ্টতা সত্ত্বেও আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
  • যে কোনো উপসর্গ চিকিৎসার চেয়ে আমরা মূল রোগটি চিহ্নিত করি।
  • আমরা যে কোনো বিষয়ে কৌশলগতভাবে চিন্তা করতে পারি এবং আমরা কি চাই আর কি চাই না সে ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
  • আমরা আমাদের অনুমান প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করি।
  • আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দূরদৃষ্টি প্রয়োগ করি। 

 

যোগাযোগ

  • আমরা সারকথাটি স্পষ্টভাবে বলতে ও লিখতে পারি।
  • আমরা যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভালোভাবে শুনতে ও বুঝতে চাই।
  • আমরা যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে প্রশান্ত মনোভাব বজায় রাখি এবং স্বচ্ছ চিন্তা করার চেষ্টা করি
  • আমরা যে কোনো মানুষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে, যদি তিনি আমার কর্মজগতের বাইরেরও হন, তার উপযোগী যোগাযোগের ভাষা ও ধরন পরিবর্তন করি।
  • আমরা সহকর্মীদের কাছে সৎ-স্বচ্ছ–কার্যকরী–সময়ানুগ প্রতিক্রিয়া (feedback) জানাই। 

 

উদ্ভাবন

  • আমরা কার্যকরী নতুন আইডিয়া সৃষ্টি করি।
  • কঠিন সমস্যার সমাধানে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করি।
  • প্রচলিত অনুমানগুলি চ্যালেঞ্জ করি এবং উন্নততর সমাধানের পরামর্শ দিই।
  • বুদ্ধিমত্তার সাথে সমস্যার জটিলতা পরিহার করি ও সোজা পথের জন্য সময় বের করি। 
  • সর্বদা পরিবর্তনের প্রচেষ্টা করি।

 

অন্তর্ভুক্তি

  • বিভিন্ন পটভূমি ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মানুষের সাথে কার্যকরভাবে যুক্ত হই।
  • উন্নততর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মনোযোগী হই এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তা গ্রহণ করি।
  • আমরা সবাই কম-বেশি পক্ষপাতদুষ্ট, এটা মেনে নিয়েই পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করি।
  • কেউ বৈষম্যের শিকার হলে বাধা দিই।
  • ভিন্ন পটভূমি ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে আসা মানুষকে এড়িয়ে চলার পরিবর্তে, তাদের প্রতি আগ্রহী হই।

 

প্রভাব

  • সর্বোচ্চ সংখ্যক জরুরী কাজ নিজে করার চেষ্টা করি।
  • বিরতিহীনভাবে কর্মদক্ষতার পরিচয় দিই যেন সহকর্মীরা আমার দ্বারা অনুপ্রাণিত হন আমার উপর নির্ভর করতে পারেন।
  • সহকর্মীদের উন্নয়নে অবদান রাখি।
  • নিয়মের চেয়ে ফলাফলের উপর জোর দিই।

 

আদর্শ’র মানব সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ক নীতিমালা

আদর্শ মানব সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চারটি মূলনীতি অনুসরণ করবে।

১। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আপনাকে একজন স্পোর্টস কোচের মতো করে ভাবতে হবে: “যদি কেউ অসাধারণ না হয়— তাকে যেতে দিন”।

২। কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের সাথে সংবদ্ধ রাখতে চাইলে তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে: “লোকজনকে নির্দেশ দেয়ার চাইতে তাদের মধ্যে কাজের প্রতি ব্যাকুলতা তৈরি করুন।”

৩। সেরা ফলাফল পেতে চাইলে অবশ্যই সেরা লোকটিকে নিয়োগ দিতে হবে: “শুধুমাত্র এমন লোকদের নিয়োগ করুন যারা কোম্পানির স্বার্থকে প্রাধান্য দিবে, এবং একটি উচ্চ কর্মক্ষমতা-সম্পন্ন কর্মক্ষেত্রের আকাঙ্ক্ষা বুঝবে এবং সমর্থন করবে”।

৪। কর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে চাইলে, তাদের কাজের মান সম্পর্কে সত্যিটাই বলতে হবে: “গতানুগতিক রেটিং দেয়ার বদলে কর্মীদের সাথে তাদের কাজের মান সম্পর্কে নিয়মিত খোলামেলা আলোচনা অনেক বেশি ফলপ্রসূ।”

এটা অস্বীকার করা বোকামি যে, প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ আপনাকে খুশি রাখা কিংবা আপনাকে সেবা দেয়া নয়—বরং তার ব্যবসায়িক লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা। অতএব লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথের প্রতিবন্ধকতাসমূহ সবার আগে দূর করতে হবে।

১। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আপনাকে একজন স্পোর্টস কোচের মতো করে ভাবতে হবে: কেউ যদি কর্ম ক্ষেত্রে অসাধারণ না হয়, তাহলে তাকে চলে যেতে দেয়া উচিত। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আপনাকে একজন স্পোর্টস কোচ এর মত করে ভাবতে হবে, মানব সম্পর্ক উন্নয়ন কর্মকর্তার মত করে নয়। আমরা খেলার মাঠে কি দেখি? ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল— যে কোনো খেলাই হোক না কেন, কোনো খেলোয়াড় ভালো না খেললে, হয় তাকে সরিয়ে অন্যকোনো পজিশনে খেলানো হয় অথবা টিম থেকে বাদ দেয়া হয়। এটি করা হয় টিমের স্বার্থে, এটাই স্বাভাবিক, খেলার জগতের অমোঘ রীতি। এ বিষয়টি কোচ জানেন, গোটা টিম জানে, এমনকি বাদপড়া খেলোয়াড়ও জানেন (অনিচ্ছাসত্ত্বেও)।

ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্পোর্টস টিম এর মধ্যে অনেক মিল আছে। উভয় ক্ষেত্রেই সবচেয়ে শক্তিশালী টিম গঠনের উপর জোর দেয়া হয়; তাদেরকে একসাথে কাজ করতে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করা হয় যেন তারা তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে পারে। টিমে যদি কেউ ভালো না খেলতে পারে, তাহলে অবশ্যই সেখানে পরিবর্তন দরকার। হয় ঐ খেলোয়াড়কে ভালো খেলতে হবে অথবা টিম থেকে বাদ পড়তে হবে— সে খেলোয়াড় যেই হোক কিংবা তার অতীত রেকর্ড যত ভালোই থাকুক।

আদর্শ একটি স্পোর্টস টিমের মতো। আপনাকে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়েই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে হবে। এবং প্রতিষ্ঠানের সফলতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিদিন আপনাকে আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করতে হবে।

২। কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের সাথে সংবদ্ধ করতে চাইলে তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে: আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের মধ্যে কোন কোন গুণাবলী দেখতে চান? প্রতিষ্ঠানকে নিজের মনে করা? জবাবদিহিতা? দায়িত্ববোধ? সৃষ্টিশীল? বুদ্ধিমত্তা? আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে আপনার কর্মীদেরকে অবশ্যই স্বাধীনতা ও দায়িত্ব দিতে হবে এবং স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে যাতে তারা উপরে উল্লেখিত গুণগুলোতে গুণান্বিত হয়।

যদি কর্মীগণ নিয়মতান্ত্রিকতায় বন্দি হয়ে যান তবে হতাশা ও ক্ষমতাহীনতায় ভোগেন। সুতরাং কর্মীদের উপর গৎবাঁধা নিয়মকানুন চাপিয়ে দেয়ার পরিবর্তে যদি তাদের নিজস্ব যুক্তি ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে অবশ্যই আশাতীত ফলাফল দেখতে পাবেন। 

আমরা আমাদের কর্মীদের ক্ষমতায়ন করি যেখানে তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়, যোগাযোগের ক্ষেত্রে সকল জটিলতা পরিহার করা হয়, যাতে তারা একক ও দলীয়ভাবে নিজেরাই নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায় নির্ধারণ করতে পারে।

আমরা কর্মীদের জন্য তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনো মেয়াদের ছুটি, সুবিধাজনক কর্মঘণ্টা ও সামর্থ্য অনুযায়ী আশানুরূপ পারিশ্রমিক দেয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করব না। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেউ এই সুবিধাগুলোর অপব্যবহার করলে কি হবে? এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে তিন নম্বর মূলনীতিতে— আমরা সেরা লোকটিকেই কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেই।   

৩। সেরা ফলাফল পেতে চাইলে অবশ্যই সেরা লোকটিকে নিয়োগ দিতে হবে: সেরা ফলাফলের জন্য সেরা লোকটিকে নিয়োগ দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। সত্যি বলতে গেলে সেরা কর্মীরা অন্যদের জন্য প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণার কারণ হন, অন্যদের মোটিভেট করেন, অন্যদের জন্য উদাহরণ তৈরি করেন, যার ফলে গোটা টিমটিই অনুপ্রাণিত হয় এবং এগিয়ে যায়। কর্মীদের কেউ পিছিয়ে পড়লে সহকর্মীদের অনুপ্রেরণা তাকে এগিয়ে আসার সাহস যোগাবে।

প্রায়শ দেখা যায়, সেরা কর্মীরা গড়পড়তা লোকদের সাথে কাজ করতে গিয়ে বিরক্ত কিংবা হতাশ হন।

সেরারা কিন্তু কাজ করার জন্য তার দলে সেরাদেরই চাইবেন। কোন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্রে তারা সমমানের মননশীলতা, বুদ্ধিমত্তা, চিন্তাধারার লোকজনকে খুঁজবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের মানব সম্পর্ক উন্নয়ন বিভাগ একগাদা জীবনবৃত্তান্ত কিংবা চাকরির আবেদনপত্র নিয়ে পড়ে থাকার চেয়ে, সহমর্মিতা ও আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার মতো সফট স্কিল-সম্পন্ন কর্মীদের বেছে নেবে।    

৪। কর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে চাইলে, তাদের কাজের মান সম্পর্কে সত্যিটাই বলতে হবে। যদি সততা এবং দয়ার মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নিতে হয় তবে আদর্শ সততাকেই বেছে নেবে। মানুষকে সবসময়ই সত্যকে মেনে নিতে হয়। যখন কেউ তার দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতে পারছে না, তাকে সত্যিটা বলুন; যখন কেউ ঠিকমত সেলস টার্গেট পূরণ করতে পারছে না, তাকে সত্যিটা বলুন; যখন প্রতিষ্ঠান তাদের দিক নির্দেশনায় কোনো বিশাল পরিবর্তন আনছে, কর্মীদের সত্যিটা বলুন। যখন কোনো কর্মী কোনো ভুল করে, আমরা তার ভুল ধরিয়ে দিই—হয় সে ভুল স্বীকার করে শোধরাবে, নয়ত চলে যাবে।

মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেখবেন সত্যি লুকিয়ে মধু-মেশানো কথাবার্তা কর্মীদের বলা হয়, যেখানে কর্মীরা সত্যটা জানেন অথচ বুঝতে পারেন যে তাদের মিথ্যা বলা হচ্ছে। তখন কর্মীরা অনুভব করেন যে তাদের বোকা বানানো হচ্ছে, তারা হতাশ হয়ে পড়েন, প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে তাদের বিশ্বাস চলে যায়, তারা মনে করেন যে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তারা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন। 

আমরা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাথে পুরোপুরি সৎ এবং স্বচ্ছ থাকতে চাই। এতে কর্মীরা সম্মানিত বোধ করবেন ও বিশ্বাসের জায়গাটা খুঁজে পাবেন। আমরা চাই কর্মীরাও আমাদের সাথে সৎ এবং স্বচ্ছ থাকুক।

 

কর্মজীবনের দর্শন

নিজের যত্ন নিন

কর্মক্ষেত্রে নিজের সেরাটা দেয়ার জন্য আপনার প্রয়োজনীয় সুবিধাদি নিশ্চিত করতে আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। আপনি নিজের জীবনের কোন কোন বিষয়ে যত্নবান হবেন সেটা আমরা আপনার উপর চাপিয়ে দিতে চাই না। 

১. মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন ছুটি: একজন ব্যক্তির জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি হচ্ছে তার মা/বাবা হওয়ার সময়টি। আমাদের মাতৃত্ব-পিতৃত্বকালীন ছুটির নীতি হচ্ছে— নিজের ও আপনার শিশুর যত্ন নিন। নতুন মা/বাবা সাধারণত সর্বনিম্ন তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের ছুটি নিতে পারেন। এই ছুটির প্রথম তিন মাস বৈতনিক এবং পরবর্তী তিন মাস অবৈতনিক।

২. সাধারণ ছুটি: আমাদের ছুটির নীতি হল, ‘ছুটি লাগলে ছুটি নিন।’ কেননা আমরা কর্মীর সততা, দায়িত্ববোধ, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং সর্বোপরি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার একাগ্রতায় আস্থাশীল। একজন কর্মীর কর্মঘন্টা কিংবা কর্মদিবস নয়; বরং সর্বোচ্চ উৎকর্ষতার সাথে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং প্রতিষ্ঠানের চাপিয়ে দেয়া কর্মঘন্টা, কর্মদিবস কিংবা সাপ্তাহিক ছুটিতে আমরা বিশ্বাসী হতে চাই না। কাজে একঘেয়েমি চলে এসেছে, প্রোডাকটিভিটি কমে গেছে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সহকর্মীদের সাথে সমন্বয় করে এসব বিষয় স্থির করে ছুটি নিন।

৩. বিবাহকালীন ছুটি: আমরা এই সময়টিকে যে কারো জন্য অর্থনৈতিক ও মানসিক উভয় দিক থেকে চ্যালেঞ্জিং মনে করি। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি ছুটি নিতে পারবেন। আদর্শ যে কোন কর্মীর নতুন জীবন শুরুর এই আনন্দঘন আয়োজনে এককালীন একটি বিশেষ ভাতা প্রদান করতে পারে।

আর্থিক সুবিধাদি ও সম্পদের ব্যবহার

আর্থিক সুবিধাদির ক্ষেত্রে আমরা কর্মীর উপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাই না। কর্মীরা আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন এবং আদর্শর সম্পদ মানে আমার সম্পদ এই বিশ্বাসে সৎ থেকে “ব্যবহার করব, নষ্ট করব না; খরচ করব, অপচয় করব না” নীতিতে কাজের প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের যে কোনো সম্পদ ব্যবহার করতে পারব।

বেতন-ভাতা: আমরা এমন সব কর্মীদের নিয়ে কাজ করতে চাই যারা কর্মী হিসেবে পুরো প্রকাশনা শিল্পেই সেরা ও অনুসরণীয় হবেন। পুস্তক প্রকাশনা একটি অবিকশিত শিল্প। তাই আর্থিক সামর্থ্যের দিক থেকে এই শিল্প অন্যান্য শিল্পের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। আমাদের সামর্থ্যের অভাব থাকতে পারে কিন্তু সদিচ্ছার বিন্দুমাত্র অভাব নেই। একজন কর্মীর যোগ্যতা, দক্ষতা, ফলাফল বিবেচনা ও বাজারদর অনুযায়ী এই শিল্পের সর্বোচ্চ বেতনটাই আমরা আমাদের কর্মীদের প্রদান করতে চাই। 

প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগের সুযোগ: যে কোন কর্মী তার বেতন-ভাতা আংশিক/পুরোপুরি বিনিয়োগ করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মালিক হতে পারবেন। আগামী অর্থ-বছরে কর্মী তার বেতন-ভাতা কিভাবে পেতে আগ্রহী— পুরোপুরি নগদ/ব্যাঙ্কে, আংশিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগের মাধ্যমে, পুরোপুরি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগের মাধ্যমে, তা অর্থ-বছরের শুরুতেই নির্ধারণ করে দিতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে কর্মীর বিনিয়োগ সম্পূর্ণ ঝুঁকি মুক্ত এবং কর্মীরা আদর্শর চাকরি ছেড়ে দিলেও শেয়ারের মালিকানা রেখে দিতে পারবেন। (প্রস্তাবিত)

সেবা/দানশীল কার্যক্রম: আপনি কোন ব্যাক্তি বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে ব্যাক্তিগতভাবে দান করার মধ্য দিয়ে সমাজের বিকাশে কিংবা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। এ ধরনের মহতী উদ্যোগকে আদর্শ সবসময় উৎসাহিত করে এবং সময় ভেদে আপনার পাশে থাকতে চায়। এধরনের সেবা এবং দানশীল কার্যক্রমে, কর্মীদের সমর্থন প্রদানের উদ্দেশ্যে আদর্শ সময় ভেদে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত অনুদান প্রদান করবে। (প্রস্তাবিত)

আপনার সেরা কাজ করতে সুবিধা

আমরা কর্মীদের স্বাধীনতা ও দায়িত্ববোধে বিশ্বাসী। আমরা কর্মীদের বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি সবারই কোনো কাজ চমৎকারভাবে করার যোগ্যতা আছে এবং আশা রাখি সুযোগ পেলে তিনি ভালো কিছু তৈরি করতে পারবেন, অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন এবং প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যে অবদান রাখতে পারবেন।

১. কাজের প্রয়োজনে ভ্রমণ ও আনুসাঙ্গিক খরচ: এ বিষয়ে আমাদের কোন বিশেষ বিধিমালা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, আপনি যেটা খরচ করবেন, সেটা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনেই করবেন এবং এ বিষয়ে আপনার বিচার-বিশ্লেষণ, সততা, স্বচ্ছতাকে আমরা সম্মান জানাব। যদি আপনার কোন দ্বিধা থাকে তবে নির্ভার হয়ে আলোচনা করুন, পরামর্শ নিন।  

২. কাজের জন্য সুবিধাজনক পরিকল্পনা: কাজের ‍উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার দরকার নেই। কেবলমাত্র আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব ঠাণ্ডা মাথায় মনোযোগের সাথে যথাসময়ে সম্পন্ন করুন। কাজের ব্যস্ততা, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম, পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাওয়া, নিজের ব্যক্তিগত কাজ পড়ে যাওয়াসহ অনেক পরিস্থিতি হতে পারে যেখানে আপনাকে মূল কাজের কথা মাথায় রেখে বাকি পরিকল্পনাগুলো এমনভাবে করতে হবে, যেন আপনি সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থেকে ভালোভাবে কাজ সম্পাদন করতে পারেন। 

 

৩. রিলোকেশন: প্রতিষ্ঠান তার কাজের প্রয়োজনে, যে কোন কর্মীকে, যে কোন কাজের জন্য, যে কোন অবস্থানে রিলোকেট করতে পারে। 

পরিশেষ: আদর্শর কর্মীগণ কেবলমাত্র নিজ দায়িত্বের ভেতরেই আবদ্ধ থাকে না। এমন অনেক ‍উদাহরণ আছে যে, কর্মীগণ নিজ দায়িত্বের বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানের জন্য এমন সব কাজ করেছেন যার কারণেই আদর্শ অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পেরেছে।

Speed and scale: Prioritize speed and scale in all your actions, but never compromise quality.

Always Follow up: We encourage people to drive things to completion. People at Adarsha strive to enhance the success of things we care about through continuous action.

Stop Complain & Start fixing: If you see something that needs fixing, fix it. Complaining about a problem hardly ever solves it, right?

Show Ownership & Accountability: We encourage you to take responsibility and ownership over everything you do here and mentor others to do the same.

Proactive, not Reactive: Our people take on challenges head-on and drive changes enthusiastically.